যখনই নতুন কোনো সংগঠন, কোম্পানি কিংবা সরকারি সংগঠনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তখন তারা অল্প সংখ্যক হলেও ট্যালেন্ট তথা মেধাবী কর্মী খোঁজে। যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ধাক্কাতেই দাঁড়িয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠালগ্নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আসে। সেই চ্যালেঞ্জ বা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত রেখে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে দক্ষ ও মেধাবী কর্মীর ভূমিকা অপরিসীম। আর দক্ষ ও মেধাবী কর্মী নিয়োগে সাধারণত নিম্নোক্ত ধাপগুলো অবলম্বনকরা হয়-
চাকরির জন্য আবেদন : কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ঐ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আবেদনপত্র বা প্রার্থীর সিভি প্রদানের মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপ শুরু হয়। আবেদনকারী সম্পর্কে চাকরিদাতার ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় এই আবেদনপত্র বা সিভি-র মাধ্যমে। একটি নিখুঁত, প্রাসঙ্গিক ও পরিচ্ছন্ন সিভি চাকরিদাতার মনে চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি করে। বলাবাহুল্য সাধারণত লিখিত পরীক্ষা বা ইন্টারভিউতে ডাক আসাটা নির্ভর করে প্রার্থীর সিভি-র ওপরে।
লিখিত পরীক্ষা বা ভাইভা : আপনার সিভি দেখার পর চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান আপনাকে লিখিত পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউতে কল করবে। তবে তার আগে প্রতিষ্ঠানটি আপনার সিভি দেখে আপনি সংশ্লিষ্ট পদের জন্য কতটুকু যোগ্য তা বিবেচনা করবে। প্রাথমিকভাবে যদি আপনার যোগ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট পদের মিল থাকে তাহলেই তারা আপনাকে ডাকবে।
ভাইভা বোর্ড : প্রার্থীকে সামনা সামনি সাক্ষাৎ করে তার অভ্যন্তরীণ প্রকৃতি সমন্ধে প্রত্যক্ষভাবে কিছু প্রশ্ন করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করাই ইন্টারভিউ-এর উদ্দেশ্য। সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সংস্থা, দপ্তর, অধিদপ্তর নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে যোগ্যপ্রার্থী বাছাই করে থাকে। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার ব্যক্তিসত্তার বৈশিষ্ট্য, বিশেষ প্রবণতা নিরূপণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন হতে পারে।
ভাইভা বোর্ডে একজন প্রার্থীর মধ্যে যে বিষয়গুলোর উপস্থিতি চাকরিদাতারা বিশেষভাবে দেখতে চায়, সেগুলো হচ্ছে- উপস্থিত বুদ্ধি, মানসিক গুণাবলী, সাধারণ প্রবণতা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা, ভদ্রতা, নম্রতা তথা সংযত অভিব্যক্তি, দুঃসাহসিক সক্রিয়তা, অনুভূতিপ্রবণতা, বিশ্বাসপরায়ণতা, ইতিবাচক মানসিকতা, দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা, সরলতা ও রক্ষণশীলতা, আত্ননির্ভরশীলতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, ৱায়বিক উত্তেজনা, সংযম, সামাজিকতা, প্রভাবিত করার ক্ষমতা, বন্ধুত্বপরায়ণতা, চিন্তাশীলতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইত্যাদি। এসব বৈশিষ্ট্য যাচাই করতে গিয়ে আপনাকে বিভ্রান্ত করার এবং আপনার ত্রুটি বা দুর্বলতা খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা বোর্ডের সদস্যরা চালাবে। এই প্রচেষ্টাকে আপনি যতটা বিফল করে দিতে পারবেন আপনি ততটা যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
কিভাবে ইন্টারভিউ বা ভাইভার জন্য প্রস্তুত হবেন
চাকরি, নিয়োগ বা ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু প্রার্থীর জন্য এটা অনেক ক্ষেত্রেই আতঙ্কজনক। তবে আতঙ্ক বা উদ্বেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ইন্টারভিউতে ভালো ফল করার জন্য মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে, বিচলিত না হয়ে এবং ধীর-স্থিরভাবে ইন্টারভিউ দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে—
ভাইভা দিতে আসার পূর্বে
- পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন, তবে একেবারে নতুন জামাকাপড় না পরাই ভালো, অনেক সময় নতুন জামা আসস্থিকর হয়।
- চুলের স্টাইল বা চেহারায় অন্য কোনো রকম বদল আনার চেষ্টা না করাই ভালো।
- খুব গাঢ় বা উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় না পরলেই ভালো।
- পকেটে একটি কলম রাখুন।
- একটি ফাইলে জরুরি কাগজপত্র নিন।
- কাগজপত্রগুলো পরপর সাজিয়ে রাখুন।
- খামের মধ্যে কাগজপত্র না নেয়াই ভালো, তাতে প্রয়োজনীয় কাগজটি দেখাতে অযথা সময় নষ্ট হয়।
- শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।
- আপনার পাঠানো অ্যাপ্লিকেশন ও বায়োডাটার প্রতিলিপি এবং মার্কশিট ইত্যাদি জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
- কোনো কাগজপত্র নিজে থেকে দেখাবেন না, চাইলে তবেই কাগজপত্র দেখান।
- ইন্টারভিউ শেষে সকল কাগজপত্র ফেরত নিতে ভুলবেন না।
ইন্টারভিউ রুমে ঢোকা, বসা ও বেড়ানো
- আপনার নাম ডাকা হলেও অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকবেন।
- ঘরে ঢুকে প্রথমে ইন্টারভিউ যারা নেবেন তাদের সাধারণ শিষ্টাচার মেনে সম্ভাষণ (সালাম বা সুপ্রভাত ইত্যাদি) করুন।
- বসতে বলা হলে তবেই বসুন, বসার আগে ধন্যবাদ জানান, সোজা হয়ে বসুন, পায়ের ওপর পা তুলে অথবা পা দুটি আড়াআড়ি করে বসবেন না।
- ইন্টারভিউ যারা নেবেন তাদের দিকে সোজাসুজি তাকান, মাটির দিকে বা ঘরের ছাদের দিকে তাকাবেন না।
- কাগজপত্র যা সঙ্গে নিয়ে গেছেন, তা টেবিলে অথবা কোলের ওপর রাখুন।
- প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে উত্তর দিন।
- একজন প্রশ্নকর্তার উত্তর দেয়ার সময় অন্যদের দিকে তাকাতেও ভুলবেন না।
- মুদ্রাদোষগুলো সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন থাকুন, গোঁফে হাত বুলানো, চুল ঠিক করা, নাক চুলকানো এসব একদম করবেন না।
- হাতের মধ্যে কলম বা চাবির গোছা নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে না যাওয়াই ভালো।
- ইন্টারভিউ শেষে উঠে দাঁড়ান, ইন্টারভিউ যারা নিচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ জানান এবং তারপর ঘর ছাড়ুন।
উত্তর দেয়া
- মন দিয়ে প্রশ্ন শুনুন ও বোঝার চেষ্টা করুন। প্রথমবারে যদি প্রশ্নটি বুঝতে না পারেন, তবে নম্রভাবে আর একবার প্রশ্নটি করতে বলুন।
- সংক্ষেপে উত্তর দিন, প্রয়োজন না হলে বড় উত্তর দেবেন না।
- উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুন আপনার আত্নবিশ্বাস যেন প্রতিফলিত হয় কিন্তু সবজান্তা ভাব করবেন না।
- কোনো উত্তর সম্পর্কে স্থির নিশ্চিত না হলে ‘আমার মনে হয়´ বা ‘আমার যতদূর জানা আছে´ বলে উত্তর শুরু করুন। একই উত্তর একাধিকবার আওড়াবেন না।
- প্রত্যেকটি শব্দ স্পষ্ট করে উচ্চারণ করুন এবং সবাই যাতে শুনতে পান সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
- সময় নষ্ট না করে উত্তর দিন। উত্তর দেয়ার সময় অযথা ঠাট্টা বা মজা করে কোনো কথা বলবেন না।
- উত্তর দেয়ার সময় যারা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তাদের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন, ঘরের আশপাশে বা বাইরে তাকিয়ে থাকবেন না।
- আপনার বায়োডাটা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর থাকলে সে সম্পর্কে শুধু নির্ভরযোগ্য তথ্যগুলো দিন।
- ইন্টারভিউ যারা নিচ্ছেন তাদের সামনে টেবিল থেকে কোনো কিছু নেয়া অসৌজন্যমূলক।
- কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় টাই অথবা জামাকাপড় ঠিক করবেন না।
- উঁচু গলায় প্রশ্ন এলেও উত্তর উঁচু গলায় দেয়া যাবে না, স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিন। ছোট সরল বাক্যে উত্তর দিন।
- জানতে না চাইলে অতিরিক্ত তথ্য জানাবেন না।
- আপনার উত্তরের জন্য বাহবা পেলে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।
আচরণ ও কথোপকথন
- গোমড়া মুখে থাকবেন না, হাসি হাসি মুখ করে থাকুন।
- ইন্টারভিউ যারা নিচ্ছেন তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়বেন না, যদি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তবে নম্রভাবে আপনার মত প্রকাশ করুন। আপনার বিরুদ্ধ মত জানানোর আগে ‘মাফ করবেন’ বা ‘কিছু মনে করবেন না´ বলে নিন।
- একটি উত্তর দেয়ার পরে পরবর্তী প্রশ্নে আগের উত্তরটির বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করা ঠিক নয়।
- আপনার কোনো ভুল চিহ্নিত হলে তা মেনে নিন।
- এমনভাবে কথা বলুন যা সহজে বোঝা যায় অথচ ফরম্যাল।
- নিজে থেকে করমর্দন করার জন্য হাত বাড়াবেন না, ইন্টারভিউ যারা নিচ্ছেন তারা শেকহ্যান্ড করার জন্য হাত বাড়ালে তবেই হাত বাড়ান।
- আপনার আচরণে-কথাবার্তায় যেন আপনার ব্যক্তিত্ব ধরা পড়ে।
- উত্তর দেয়ার সময় আবেগ পরিত্যাগ করার চেষ্টা করবেন | উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন কোনো ব্যক্তি, সমষ্টি, জাতি, ধর্ম বা রাষ্ট্র সম্পর্কে অবমাননাকর বেফাঁস কথা বেরিয়ে না যায়।
- আপনার কৃতিত্ব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিনীতভাবে যতটুকু প্রমাণসাপেক্ষ ততটুকুই জানান, অযথা নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করবেন না।
- যারা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তাদেরকে আপনার পছন্দের বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে সে বিষয়ে প্রশ্ন করার অনুরোধ জানানো অন্যায় নয়, তবে খেয়াল রাখবেন সেই বিষয়টি সম্পর্কে যেন সত্যিই আপনার দখল থাকে।
- ঠাণ্ডা মাথায় ইন্টারভিউ দিন। আপনার মুখমণ্ডল বা দেহভঙ্গি যেন কাঠ কাঠ হয়ে না থাকে, যতটা সম্ভব সহজ স্বাভাবিক থাকুন এবং সহজভাবে সবকিছু মোকাবিলা করুন ।
- অতি উচ্ছ্বাস বা ক্রুদ্ধ কোনোটাই হওয়া যাবে না, যদিও প্রশ্নকর্তারা আপনার জন্য সুখকর বা বিব্রতকর কোনো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
এছাড়াও ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়ের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে-
১. যে কোনোভাবে একটি চাকরি পেতে হবে এই মানসিকতা নিয়ে অনেকে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে প্রচুর সংখ্যায় আবেদন করতে থাকেন। এটা ঠিক নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দরখাস্তকারী ইন্টারভিউতে ডাক পান না। আবার দু্-এক জায়গায় ডাক পেলেও চাকরি পান না। এতে মনে হতাশা জন্মায়, আত্নবিশ্বাস নষ্ট হয়। যে ব্যক্তি যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং যিনি যে বিষয়ে পারদর্শী তার সেই বিষয় সম্পর্কিত কোনো কাজের জন্য আবেদন করা উচিত।
২. বিজ্ঞাপন দেখে ভালোভাবে বিচার-বিবেচনা করে আবেদন করার পর ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। অনেকে ভাবেন ইন্টারভিউতে ডাক পেলে তবেই নিজেকে প্রস্তুত করবেন। এটা ঠিক নয়। আত্নবিশ্বাস বাড়াতে হলে নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে এবং এটা আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই।
৩. ইন্টারভিউকে জীবনের একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে না ধরে স্বাভাবিক পরিণতি মনে করতে হবে। অনেকের মনে এই চিন্তা আসে, ‘এই ইন্টারভিউতে একটা চাকরি পেতেই হবে, না হলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে ভবিষ্যতে আর কোনো ইন্টারভিউতে ডাক পাব না, চাকরিও পাব না´ ইত্যাদি। এই ধরনের চিন্তার প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়। এতে জীবনে হতাশা বাড়ে।
৬. ইন্টারভিউ দেয়ার সময় কোনো অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা একেবারেই চলবে না। নিজেকে বুদ্ধিমান ও কাজের যোগ্য হিসেবে প্রমাণিত করার জন্য যেটুকু বলা প্রয়োজন সেটুকুই বলবেন।
৭. ইন্টারভিউর ফলাফল কি হলো বা প্রার্থীকে কিভাবে তা জানানো হবে, তা জিজ্ঞাসা করা একেবারেই উচিত নয়।
৮. যাবতীয় বস্তুগত প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিকভাবেও প্রস্তুতি নিন। কল্পনা করুন আপনি যথাযথভাবে ইন্টারভিউ মোকাবেলা করছেন এবং আপনি সফল হয়েছেন। এ ধরনের কল্পনা আপনার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং নার্ভাসনেস কাটাতে সাহায্য করবে।
আসলে ইন্টারভিউ নিয়ে আমরা যতটা আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হই, ততটা আতঙ্ক বা উদ্বেগের বিষয় এটি একেবারেই নয়। কারণ নিয়োগকর্তা উপযুক্ত ব্যক্তিটিকে নিয়োগদানের জন্যই ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করেন, যাতে করে অনেকের মধ্য থেকে যোগ্য লোকটিকে খুঁজে নিতে পারেন। তাই অযথা আতঙ্ক বা উদ্বেগ নয়, বরং আপনার কাজ হবে নিজেকে উপযুক্ত বা যোগ্য করে গড়ে তোলা। আর নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য যেসব পদ্ধতি বা উপায় গ্রহণ করা দরকার, সেগুলো গ্রহণ বা অনুসরণ করার অর্থই হলো, আপনার প্রতিটি ধাপ সাফল্যের সঙ্গে হাঁটা। তাই বলে সাফল্য যে প্রথমবারেই পাওয়া যাবে, এই কঠিন প্রতিযোগিতার যুগে এমনটি না ভাবাই ভালো। তবে আপনি যদি নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন তাহলে সাফল্য যে আপনার দরজায় কড়া নাড়বেই, এমন প্রত্যাশা আমরা খুব সহজেই করতে পারি।
চাকরি প্রাপ্তির কার্যকর কৌশল
সদ্য পাস করে যারা এখন চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন তারা মূলত বাস্তব জগতে পা রাখতে যাচ্ছেন। এটি মূলত নিজস্ব ক্যারিয়ার গঠনের সময়। এটি একটি পিচ্ছিল রাস্তা। অসাবধানতার কারণে যে কেউ পা পিছলে পড়ে যেতে পারে আর তাতে ক্যারিয়ারে নামতে পারে বড় ধরনের ধস। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ও চ্যালেঞ্জিং প্রফেশনালদের চাহিদা ব্যাপক। এখন প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে নিজেকে চাহিদাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তুলবেন। এর উত্তর একটাই- সেটা হলো কৌশল। এই কৌশলই বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের বড় বড় সাফল্যের কারণ। তাই যারা চাকরির বাজারে প্রবেশ করেছেন তাদের ন্বিোক্ত কৌশলগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে—
কৌশল-১ : শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যেকেই যখন তার ক্যারিয়ার নির্ধারণ করতে চাইবে তখন তার নিজস্ব যোগ্যতা, দুর্বলতা, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে হবে। যার যে বিষয়ে বিশেষ পছন্দ আছে সে বিষয় সম্পর্কে আগেই খোঁজ-খবর নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। নিজ নিজ পছন্দ এবং যোগ্যতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে হবে।
কৌশল-২ : দ্রুত চাকরি তারাই পান যারা তাদের মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকক্ষেত্রে সঠিকমাত্রায় প্রয়োগ বা উপস্থাপন করতে পারেন। এই প্রয়োগ করার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যত বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন আপনার মেধা ব্যবহারের ক্ষমতা ও কৌশল ততো বেশি বৃদ্ধি পাবে।
কৌশল-৩ : যেখানেই চাকরির দরখাস্ত করুন না কেন অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পেশা বা চাকরি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খোঁজ খবর রাখবেন। সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয় হলো সেটা আপনার জন্য কতটা উপযোগী তা যাচাই করবেন। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রার্থী বাছাইয়ের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
কৌশল-৪ : চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আর একটি বিষয় হলো নেটওয়ার্কিং। নিজস্ব কোনো সুপ্ত মেধা থাকলে তার বিকাশ ঘটিয়ে, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে যারা আগে চাকরি পেয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাহচর্য এবং প্রতিবেশী, যারা চাকরিজীবী তাদের সাহচর্যে যেতে হবে। যদি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে তাদের তা জানাতে হবে। আর তা না থাকলে তাদের কাছে ‘জীবনবৃত্তান্ত’ জমা দিয়ে রাখতে হবে।
কৌশল-৫ : যতদূর সম্ভব সুন্দর এবং যুগপোযোগী পোশাক পরিধান করতে হবে। পোশাক পরিচ্ছদে মানুষের ব্যক্তিত্ব যেমন ফুটে ওঠে তেমনি স্মার্টনেসও বৃদ্ধি পায়। জীবনবৃত্তান্তে প্রদত্ত ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। চাকরি প্রাপ্তিতে প্রার্থীকে অবশ্যই পেশাগতভাবে দক্ষ হতে হবে। কেননা চাকরি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি ফ্রেস প্রার্থীদের চেয়ে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
কৌশল-৬ : হতাশ হওয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই। কারণ বাস্তব জগৎ যেমন কঠিন তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। দু একবার ব্যর্থ হয়ে হতাশ হলে চাকরি কপালে জুটবে না। তবে চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে ব্যবধানটা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই বাস্তব-সম্মত প্রত্যাশা থাকা উচিত। আকাশ কুসুম কল্পনা যেমন সম্ভব নয় তেমনি তা করাও উচিত নয়। প্রথমেই ফুল টাইম চাকরি না পেলে পার্ট টাইম চাকরি পেলেও করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সুবিধা সেটা হলো হতাশা কিছুটা কাটবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে, যা একজন প্রার্থীর চাকরির জন্য বিশেষ প্রয়োজন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা কতটুকু কাজে দিবে। যদি তা ভিন্ন ধরনের হয় তাহলে গভীর চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
কৌশল-৭ : সুযোগ চিনে নেওয়ার ক্ষমতাও (ability to recognize opportunity) চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বিচক্ষণতা। যারা এক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারাই ভালো ভালো অফারগুলো ভোগ করে। বলাবাহুল্য সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক সুযোগ নষ্ট হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই অক্ষমতা (inability of decison making) কারো কারো ক্রমেই অভ্যাসে পরিণত হয়।
কৌশল-৮ : সুযোগ চিনে নিতে হলে চ্যালেঞ্জিং-এর মানসিকতা থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট চাকরি বা পেশার বিভিন্ন দিক বিচার-বিবেচনা করে ঝুঁকি নিতে হয়। চাকরিতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেয়ার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ অনেকসময় মানসিক দৃঢ়তা ও সাহস বড় বড় সাফল্য এনে দেয়।
সর্বোপরি বলা যায়, সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চাকরির বাজারেও আপনাকে নিতে হবে নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয়। প্রতিনিয়ত সনাতনি চিন্তাধারার বিলুপ্তি ঘটছে। আসছে নতুন চিন্তা, নতুন চেতনা। আপনার নিজের যোগ্যতা, চাকরির বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি, চাকরিদাতাদের চাহিদা ও মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিক সমন্বয় সাধনের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। চাকরি দাতাদের কাছে আপনার সঠিক উপস্থাপনটা যতো কৌশলের সাথে তথা ভালোভাবে করতে পারবেন আপনার চাকরিও তত দ্রুত হওয়ার পথ সুগম হবে।
চাকরিজীবী তাদের সাহচর্যে যেতে হবে। যদি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে তাদের তা জানাতে হবে। আর তা না থাকলে তাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে রাখতে হবে।
কৌশল-৫ : যতদূর সম্ভব সুন্দর এবং যুগপোযোগী পোশাক পরিধান করতে হবে। পোশাক পরিচ্ছদে মানুষের ব্যক্তিত্ব যেমন ফুটে ওঠে তেমনি স্মার্টনেসও বৃদ্ধি পায়। জীবনবৃত্তান্তে প্রদত্ত ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। চাকরি প্রাপ্তিতে প্রার্থীকে অবশ্যই পেশাগতভাবে দক্ষ হতে হবে। কেননা চাকরি প্রদানকারী কতৃপক্ষ পুরোপুরি ফ্রেস প্রাথীদের চেয়ে অভিজ্ঞ প্রাথীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
কৌশল-৬ : হতাশ হওয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই। কারণ বাস্তব জগৎ যেমন কঠিন তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূণ । দু একবার ব্যথ হয়ে হতাশ হলে চাকরি কপালে জুটবে না। তবে চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে ব্যবধানটা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই বাস্তব-সম্মত প্রত্যাশা থাকা উচিত। আকাশ কুসুম কল্পনা যেমন সম্ভব নয় তেমনি তা করাও উচিত নয়। প্রথমেই ফুল টাইম চাকরি না পেলে পার্ট টাইম চাকরি পেলেও করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সুবিধা সেটা হলো হতাশা কিছুটা কাটবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে, যা একজন প্রাথীর চাকরির জন্য বিশেষ প্রয়োজন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা কতটুকু কাজে দিবে। যদি তা ভিন্ন ধরনের হয় তাহলে গভীর চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
কৌশল-৭ : সুযোগ চিনে নেওয়ার ক্ষমতাও (ability to recognize opportunity) চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বিচক্ষণতা। যারা এক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারাই ভালো ভালো অফারগুলো গ্রহণ করে। বলাবাহুল্য সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক সুযোগ নষ্ট হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই অক্ষমতা (inability of decison making) কারো কারো ক্রমেই অভ্যাসে পরিণত হয়।
কৌশল-৮ : সুযোগ চিনে নিতে হলে চ্যালেঞ্জিং-এর মানসিকতা থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট চাকরি বা পেশার বিভিন্ন দিক বিচার-বিবেচনা করে ঝুঁকি নিতে হয়। চাকরিতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেয়ার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ অনেকসময় মানসিক দৃঢ়তা ও সাহস বড় বড় সাফল্য এনে দেয়।
সবোপরি বলা যায়, সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি ও পারিপাশ্বিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চাকরির বাজারেও আপনাকে নিতে হবে নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয়। প্রতিনিয়ত সনাতনি চিন্তাধারার বিলুপ্তি ঘটছে। আসছে নতুন চিন্তা, নতুন চেতনা। আপনার নিজের যোগ্যতা, চাকরির বাজারের সামগ্রিক পরিস্তিতি, চাকরিদাতাদের চাহিদা ও মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিক সমন্বয় সাধনের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। চাকরি দাতাদের কাছে আপনার সঠিক উপস্থাপনটা যতো কৌশলের সাথে তথা ভালোভাবে করতে পারবেন আপনার চাকরিও তত দ্রুত হওয়ার পথ সুগম হবে।